ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে সহায়ক সেবা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - NCTB BOOK

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করতে অনেক ধরনের সহায়তার প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন রকম সহায়তা একজন উদ্যোক্তাকে ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনায় অনুপ্রাণিত করে। এ অধ্যায়ে আমরা ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিল্পনীতি, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন ধরনের সহায়ক সেবা সম্পর্কে জানতে পারব।



এ অধ্যায়টি পাঠ শেষে আমরা-

  • সহায়ক সেবার ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • বাংলাদেশে ব্যবসায়ের সহায়ক সেবার ধরন ও উৎসগুলোর নাম বলতে পারব ।
  • শিল্পনীতিতে উল্লিখিত সহায়তার ধরনগুলো বর্ণনা করতে পারব।
  • বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা প্রদত্ত সহায়ক সেবার ধরন বর্ণনা করতে পারব।
  • বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ প্রদত্ত সহায়ক সেবার ধরন বর্ণনা করতে পারব।
  • বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রদত্ত সহায়ক সেবার ধরন বর্ণনা করতে পারব।
Content added By
অঞ্চলভেদে কর অবকাশ সুবিধা প্রদান
প্রাথমিক মূলধনের যোগান দেওয়া
শিল্পপ্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্তিকরণের সুবিধা
বর্তমান প্রতিষ্ঠানের শাখা বৃদ্ধিতে সহায়তাদান

উদ্যোগ উন্নয়নে সহায়ক সেবার ধারণা

নতুন ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপন একটি সৃজনশীল ও গঠনমূলক কাজ। কিন্তু এর সাথে ঝুঁকিও জড়িত। ফলে সহজেই কেউ এ কাজে এগিয়ে আসতে চায় না। এর জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের সহায়তা। উদ্যোগ গ্রহণের এসব সহায়তা একজন সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাকে ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপন ও তা সফলভাবে পরিচালনায় অনুপ্রাণিত করে। প্রকৃতি অনুয়ায়ী এসব সহায়তাকে উদ্দীপনামূলক, সমর্থনমূলক ও সংরক্ষণমূলক এ তিন ভাগে ভাগ করা যায়। উদ্দীপনামূলক সহায়তা বলতে বোঝায় বিভিন্ন প্রকার অনুপ্রেরণামূলক প্রশিক্ষণ, বিনিয়োগ সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবহিতকরণ, শিল্প স্থাপনে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার, কারিগরি ও অর্থনৈতিক তথ্য সরবরাহ ও পরামর্শ দানকে বোঝায়। সমর্থনমূলক সহায়তার মাধ্যমে উদ্যোক্তা শিল্প স্থাপন, পরিচালনা, সম্পদ ব্যবহার ও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধীকরণ, পুঁজির সংস্থান, অবকাঠামোগত সহায়তা, কর অবকাশ, ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য সমর্থনমূলক সহায়তা। অন্যদিকে সংরক্ষণমূলক সহায়তার মাধ্যমে ব্যবসায়ের কার্যক্রম পরিচালনা ও সম্প্রসারণের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো দুর করা হয়।

Content added By

সহায়তার বিভিন্ন উৎস

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণ ও স্থাপনে সহায়তাকারী বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। ঐ সকল প্রতিষ্ঠান দেশে ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ গ্রহণ, শিল্প স্থাপন ও পণ্য-দ্রব্যের বিপণনে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে থাকে। তাছাড়া জাতীয় শিল্পনীতিতে ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণে সহায়ক বিভিন্ন দিক উল্লেখ করা হয়েছে যা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণামূলক হতে পারে। নিম্নে এগুলোর তালিকা প্রদান করা হলো-

সহায়তার বিভিন্ন উৎস
১. বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা
২. বাংলাদেশে ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক
৩. বাণিজ্যিক ব্যাংক
৪. বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা সংস্থা
৫. বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ
৬. যুব অধিদপ্তর
৭. মহিলা অধিদপ্তর
৮. বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা

 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (Bangladesh Small and Cottage Industries Corporation)

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের শ্রম, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে গণপরিষদে একটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন প্রতিষ্ঠার বিল উপস্থাপন করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে পূর্ব পাকিস্তানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (ইপসিক) প্রতিষ্ঠিত হয় যা স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) নাম ধারণ করে। ২০১২ সালে বিসিকের গৌরবময় ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়।
বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সম্প্রসারণে নিয়োজিত সরকারি খাতের প্রধান সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। এ সংস্থার প্রধান কাজ হলো এ জাতীয় শিল্পখাতের উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগে পরামর্শদান। বিসিক প্রদত্ত অন্য সহায়তাগুলো নিম্নরূপ —

  • শিল্পসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ
  • উদ্যোক্তা চিহ্নিতকরণ
  • শিল্পোদ্যোগ উন্নয়ন
  • প্রকল্প নির্বাচন
  • প্রকল্প মূল্যায়ন
  • অবকাঠামোগত উন্নয়ন
  • ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা উন্নয়ন
  • পণ্য ডিজাইন
  • কাঁচামাল সরবরাহে সাহায্য
  • উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বিপণনে সহায়তা
  • ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের রেজিস্ট্রেশন

উল্লেখিত সহায়তাদি ও শিল্প স্থাপনসম্পর্কিত যে কোনো পরামর্শের জন্য উদ্যোক্তাগণকে প্রত্যেক জেলায় অবস্থিত বিসিকের শিল্পসহায়ক কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। ২০১২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ৭৪টি শিল্প নগরী কার্যালয়, প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ৪২৭৭টি কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এ সমস্ত শিল্প কারখানায় ৩৩ লাখ ৮১ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।


বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (Bangladesh Development Bank Limited)

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক । বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক এবং বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা একত্রিত হয়ে ৩রা জানুয়ারি ২০১০ সাল হতে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড নামে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করে। বাণিজ্যিক ব্যাংকিং ছাড়াও বিডিবিএল সরকারি ও বেসরকারি শিল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকে। দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে নতুন শিল্প প্রকল্প স্থাপন, চালু শিল্প প্রকল্পগুলোর আধুনিকীকরণ, যন্ত্রপাতি পরিবর্তন ও সম্প্রসারণের জন্য শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ ও পরামর্শদান ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রধান কাজ। এছাড়া বিডিবিএল-এর উল্লেখযোগ্য সহায়তাগুলো হলো-

ক. ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ খাতটি শ্রমঘন হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দ্রুত অবদান রাখতে সক্ষম। এসএমইকে 'Employment Generating Machine' হিসেবে বিবেচনা করা হয় । আমাদের দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ও উদ্যোক্তার মধ্যে ক্ষুদ্র উদ্যোগের মাধ্যমেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্ব লাঘব ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা বেশি। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী বিডিবিএল শাখাগুলো এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার অন্যূন ৪০% ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করে থাকে। অবশিষ্ট অংশ বিতরণ করে মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে ।
খ. উৎপাদন ও সেবা খাতকে অগ্রাধিকার
দেশে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসা খাতের চেয়ে শিল্প ও সেবা খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। তাই বিডিবিএল শাখাসমূহকে উৎপাদনমুখী শিল্প ও কৃষিভিত্তিক সেবা খাতে ঋণ বিতরণে সচেষ্ট থাকতে হয়।
গ. নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার
যদি কোনো নারী ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারী হন কিংবা অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডারগণের মধ্যে অন্যূন ৫১% (শতকরা একান্ন ভাগ) অংশের মালিক হন তাহলে তিনি নারী শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে পরিগণিত হবেন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশই নারী। জনসংখ্যার এ কাঠামোর কারণে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যে অর্থনীতির মূল স্রোতে নারীদের অংশগ্রহণ একান্তভাবেই অপরিহার্য। আমাদের নারী সমাজের নিষ্ঠা, আগ্রহ, উদ্ভাবন শক্তি ও শ্রম নিপুণতা রয়েছে। বিশেষ করে মাইক্রো ক্রেডিট কার্যক্রম ও পোশাক শিল্পে নারীদের অব্যাহত অংশগ্রহণ শিল্পায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এ জন্য বিডিবিএল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে নারী উদ্যোক্তাদের জন্যে সহজ শর্তে অধিকতর প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা প্রদান করছে।


ব্যাণিজ্যিক ব্যাংক (Commercial Bank)

দেশের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সারা দেশে বিরাজমান তাদের শাখাগুলোর মাধ্যমে শিল্প ও ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের আর্থিক সেবা প্রদান করে আসছে। বিশেষ করে নিবিড় শ্রমঘন ও কর্মসংস্থানমূখী অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহের দ্রুত প্রসারের জন্য বিভিন্ন সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এসএমই খাতের উন্নয়নে একমালিকানা, অংশীদারি, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে আসছে। ব্যবসায় বা প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী ঋণসীমা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা। ঋণের মেয়াদ ব্যবসায় বা প্রকল্পের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। তবে চলতি মূলধনের ক্ষেত্রে ১ বৎসর এবং মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে ৩-৭ বছর পর্যন্ত বিবেচিত হয়। এ সকল ক্ষেত্রে ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা নিম্নরূপ :

  • ঋণপ্রার্থী উদ্যোক্তাকে ন্যূনতম ২ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ।
  • উদ্যোক্তাকে সুস্থ, শিক্ষিত এবং বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • ঋণখেলাপী, দেউলিয়া, উন্মাদ ও জড়বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
  • উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
  • মহিলা উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বেসিক ব্যাংক লিমিটেড (Bangladesh Small Industries and Commerce Bank Limited - BASIC)

বেসিক ব্যাংক বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইনের অধীন ১৯৮৮ সালে নিবন্ধিত হয় এবং ১৯৮৯ সালের ৩১ শে জানুয়ারি থেকে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এটি ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্পের অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হলেও বর্তমানে ব্যাংকটি বাণিজ্যিক ও উন্নয়নমূলক ব্যাংকিং কার্যক্রম উভয়ই পরিচালনা করে থাকে। তবে ব্যাংকের স্মারকলিপিতে উল্লেখ অনুযায়ী ব্যাংক তার মোট ঋণযোগ্য তহবিলের ৫০% ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্যাংক মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থায়ন করছে। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে তৈরি পোশাক, কৃষিভিত্তিক শিল্প যেমন- পোল্ট্রি, প্রকৌশল, খাদ্য ও খাদ্য জাতীয় শিল্প, রাসায়নিক শিল্প, ঔষধ শিল্প, কাগজ, বোর্ড তৈরি, প্রকাশনা ও প্যাকেজিং শিল্প, চামড়া ও পাট শিল্প। বেসিক ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত বিগত কয়েক বছরের শিল্প ঋণের খতিয়ান নিম্নে দেওয়া হলো-

বছর কোটি টাকা
২০০৫ ৯৯৮.৭৫
২০০৬ ১২২৪.৩৫
২০০৭ ১৩৯০.১৪
২০০৮ ১৭২২.৬৪
২০০৯ ১৭৮২.৫৪
২০১০ ২৭৭৭.৭৯
২০১১ ৩৩৩২.৩১

সূত্র : বেসিক ব্যাংক।

বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সাহায্য কেন্দ্র (Bangladesh Industrial Technical Assistance Centre-BITAC)

দেশের শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংস্থাটি প্রদত্ত সহায়তাগুলো হলো কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, নতুন ডিজাইন ও যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত করানো ও যন্ত্রপাতি স্থাপনে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে উপদেশ প্রদান। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন প্রকাশনা, সেমিনার, দলগত আলোচনা, প্রদর্শনী ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে আধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানদান। চারটি আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে বিটাক তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কেন্দ্রগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও খুলনায় অবস্থিত। বর্তমানে বগুড়ায় আরেকটি আঞ্চলিক কেন্দ্র স্থাপনের জন্য একটি প্রকল্প কাজ করছে।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (Bangladesh Council for Scientific and Industrial Research)

জাতীয় শিল্পোন্নয়নে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশে শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তি বিষয়ক সমস্যাবলির উপর গবেষণা করা, গবেষণায় উৎসাহিত করা ও গবেষণা পরিচালনায় পরামর্শ প্রদান করা এ পরিষদের অন্যতম উদ্দেশ্য। এ পরিষদ শিল্প ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণার দিকনির্দেশনা, নতুন পণ্য ও প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করে থাকে। একজন ব্যবসায় বা শিল্প উদ্যোক্তা এ পরিষদের আবিষ্কৃত পণ্য বা প্রযুক্তি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যবহার করে উৎপাদনে অবদান রাখতে পারে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর (Directorate of Youth Development)

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন যুব অধিদপ্তর যুবক ও যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত অনেকগুলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে যুব অধিদপ্তর শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত যুবকদেরকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়, কৃষি খামার, মৌমাছি পালন, গবাদিপশু পালন, মৎস্য চাষ, কম্পিউটার শিক্ষা, অফিস ব্যবস্থাপনা, সেলাই ও এমব্রয়ডারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। প্রশিক্ষণের সাথে সাথে সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে প্রারম্ভিক পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থাও করে থাকে।


মহিলা অধিদপ্তর (Directorate of Women Affairs)

শহর ও গ্রামের মহিলাদের সৃজনশীলতার বিকাশ, আত্মকর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে মহিলা অধিদপ্তর নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করে থাকে। প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন, হস্ত শিল্প, বাটিকের কাজ, বুনন শিল্প, সেলাই ইত্যাদি।

বেসরকারি সংস্থা (Non-government Organizations - NGOs)

উদ্যোক্তা উন্নয়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছে। এ সংস্থাগুলো মূলত গ্রামীণ বিত্তহীন ও স্বল্পবিত্তদের উদ্যোগী হবার ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। বাংলাদেশে অসংখ্য এনজিওর মধ্যে ব্র্যাক-এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ব্র্যাক (Bangladesh Rural Advancement Committee)

২০১০ সালের হিসেব মতে বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এনজিও বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হচ্ছে ব্র্যাক। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জনাব ফজলে হোসেন আবেদের নেতৃত্বে এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করলেও বর্তমানে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নিয়ে এ সংস্থাটি বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। উদ্যোক্তা উন্নয়নে ব্র্যাক যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেগুলো হলো—
১. ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন কার্যক্রম : এর মধ্যে রয়েছে কাপড় বুনন, হাঁস-মুরগি পালন, আসবাবপত্র, তৈল উৎপাদন, গুড়, দড়ি, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরি, ধান ভানা।

২. সহযোগী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন : এ কর্মসূচির আওতায় ভূমিহীন লোকদেরকে প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, ব্যবস্থাপনা, বিপণন প্রভৃতি কার্যক্রমের মাধ্যমে সংগঠিত করা হয়।

৩. উৎপাদন কেন্দ্র উন্নয়ন : আধুনিক ডিজাইন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামীণ শিল্পজাত সামগ্রীর মান উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া দেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প যেমন সিল্ক, জামদানি, নকশিকাঁথা উন্নয়নেও ব্র্যাক কাজ করছে। ব্র্যাকের নিজস্ব ডেইরি ফার্ম ও নিজস্ব বিপণিকেন্দ্র 'আড়ং' রয়েছে।

মাইডাস (Micro Industries Development Assistance Services - MIDAS )

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে মাইডাস ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের আর্থিক, কারিগরি, ব্যবস্থাপনা জাতীয় সহায়তা প্রদান করে। মাইডাসের সামগ্রিক কার্যক্রমগুলো হলো-
১. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ঋণ সুবিধা প্রদান ।
২. জাতীয়, বহুজাতিক, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রশিক্ষণ, তথ্য ও পরামর্শ সেবা প্রদান
৩. ব্যবসায় ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও গবেষণা পরিচালনা ।
৪. ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে সহযোগিতার নেটওয়ার্ক বাড়ানো।
৫. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণনে সহায়তা করা।

প্রশিকা (Proshika)
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিকাশে প্রশিকা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কৃষি শিল্প, তাঁত শিল্প, সিল্ক উৎপাদন হস্ত শিল্প, গবাদিপশু পালন, মৌমাছি পালন, চারা উৎপাদনসহ অনেক নতুন পেশা তৈরি করছে প্রশিকা। এসব কাজে অনেক উদ্যোক্তা এগিয়ে এসেছেন এবং প্রশিকা তাদেরকে ঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।

ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (Thengamara Mohila Sabuj Sangha - TMSS)
উত্তরবঙ্গের জেলা বগুড়াকে কেন্দ্র করে ১৯৮০ সালে ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ কাজ শুরু করলেও বর্তমানে সারা দেশেই এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মূলত দরিদ্র ও বিত্তহীন মহিলাদের ঋণ সহায়তা প্রদান, প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করার পাশাপাশি টিএমএসএস দোকান পরিচালনা, হাঁস-মুরগির খামার পরিচালনা, মাছ চাষ, নার্সারি পরিচালনা ও কুটির শিল্প পরিচালনাসহ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে ৷

 

Content added || updated By

জাতীয় শিল্পনীতি ২০১০-এ উল্লিখিত বিভিন্ন ধরনের সহায়তা

উদ্দীপনামূলক
  • নারী ও পুরুষ ব্যবসায়ীরা যাতে সমাজে অর্থনৈতিক পরিবর্তন সংঘটনে সক্রিয় এজেন্ট হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করতে পারে সেজন্য উদ্যোক্তা সংস্কৃতির প্রসারে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ।
  • উৎপাদনশীল ও সেবা খাতের সফল উদ্যোক্তাদেরকে স্বীকৃতি, জাতীয় উদ্যোক্তা দিবস পালন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক শিক্ষাক্রমের প্রবর্তন।
  • মানব পুঁজি বিকাশের বেশির ভাগ কার্যক্রম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এবং দেশব্যাপী শুরু করা যুব-সম্প্রদায়কে জীবনসংগ্রামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে, দেশের উন্নয়ন ও সফলতা এবং সীমিত ভৌত সম্পদের বিষয়ে সচেতন করার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে জাতি গঠনমূলক ও উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি ও এ ধরনের শিক্ষাকে উৎসাহিতকরণ ।
সমর্থনমূলক
  • শিল্পক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে শিল্প পণ্যের অধিকতর উন্নয়নের উদ্দেশ্যে টেকসই ও নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবকদের পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা। কারিগরি প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রযুক্তি উন্নয়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং লাগসই প্রযুক্তি নির্বাচন ও প্রয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় শিল্প কারখানাসমূহকে সহায়তার লক্ষ্যে বিটাকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালীকরণ।
  • দেশীয় বিনিয়োগকারীদের বিশেষ করে মাইক্রো, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিনিয়োগকারীদের কাছে সহজলভ্য স্থানীয় ও যথোপযুক্ত প্রযুক্তি গড়ে তোলার জন্য সরকার দেশীয় যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক শিল্পকে স্থানীয় কারিগরি ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে কাজ করতে সুযোগ প্রদান ।
  • ৩০/০৬/২০১১ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে এরূপ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিম্নরূপ কর অবকাশ প্ৰদান :
  • (ক) তিন পার্বত্য জেলা ব্যতীত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রথম দু'বছর আয়ের ১০০% ভাগ, পরবর্তী দু'বছর ৫০% ও শেষ (৫ম) বছর ২৫% ভাগ কর অবকাশ ।
  • (খ) রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর বিভাগ এবং তিন পার্বত্য জেলায় স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৭ (সাত) বছর মেয়াদি কর অবকাশের মধ্যে প্রথম তিন বছর কর অবকাশের হার ১০০%, পরবর্তী ৩ বছর ৫০% ও শেষ বছরে (৭ম বছর) ২৫%।
সংরক্ষণমূলক
  • আইসিটি, লন্ড্রি, পর্যটন ও সেবা, বিউটি পারলার, বিজ্ঞাপনী সংস্থা ইত্যাদি সেবামূলক খাতসহ মৎস্য, কৃষি ও হস্তশিল্প খাত এবং গবাদি পশু প্রতিপালন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে নারী শিল্পোদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া।
  • ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পের বিকাশে সহায়তাদান, তাঁতশিল্প রক্ষা, বেনারসি ও জামদানি পল্লীর মত রেশম পল্লী গড়ে তোলাসহ তাঁতি, কামার, কুমার, মৃৎশিল্প, বাঁশ, বেত, তামা, কাঁসা ও পাটি শিল্পে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া।

 

Content added || updated By

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

Please, contribute to add content into বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content
Please, contribute to add content into সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content

আরও দেখুন...

Promotion